লাল ইটের বাড়ি। দু পাশে বাড়ি মধ্যখানে মসৃন পিচঢালা পথ। সে সব লাল রঙা বাড়ির ছোট্ট খোঁপে চড়-ই পাখির দৌঁড়। সে দৌড়ের সঙ্গি হবে ক্যামেরা, চলবে ক্লিকক্লিক। এসব বানানো গল্প নয়। সত্যি হবে যদি এই ঈদের ছুটিতে আপনি চলে যান ঢাকার কাছের পানাম নগরে। নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ একটি আকর্ষনীয় ঐতিহাসিক স্থান। এখানেই পানাম নগর বা পানাম সিটির অবস্থান। এখানে আরও আছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন প্রতিষ্ঠিত লোক ও কারু শিল্প যাদুঘর।
১৫০ বিঘা আয়োতনের সুবিশাল কমপ্লেক্স শাখার রাজধানী লুপ্তপ্রায় নগরের মধ্যে টিকে থাকা পানাম নগরের কথা বলেছি। আরও দেখতে পাবেন পানাম ব্রীজ, নীলকুঠী, গোয়ালদী শাহী মসজিদ সহ অনেক পীর-ওলীদের মাজার। লিচুর দিন শেষ। তবে কোনো এক গ্রীষ্মে এখানে গেলে পেয়ে যাবেন গ্রীষ্মের মধুফল ফজমী লিচু। এখন সময় হিজলের। শহরের খুব কাছে এত্ত এত্ত হিজলবিথী দেখা ভাগ্যের ব্যাপার। তাহলে, চলুন ঘুরে আসি সোনারগাঁ থেকে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বেষ্টিত সোনারগাঁও বাংলার প্রাচীন একটি রাজধানী। বর্তমান রাজধানী ঢাকার খুব কাছেই অবস্থিত এই আকর্ষণীয় সোনারগাঁও। এখানে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের বিশাল চত্বরে রয়েছে বেশ কয়েকটি পিকনিক স্পট। বিশেষ করে পিকনিক স্পটে শীতকালে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থীএখানে ভ্রমণে আসে।
প্রাচীন রাজধানী সোনারগায়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা নিতে চাইলে যে কেউ পারবেন খুব অল্প সময়ের মধ্যে। নদী-নালা, খাল-বিল পরিবেষ্টিত এবং অসংখ্য গাছপালা সবুজের সমারোহ আপনাকে সহজেই আকৃষ্ট করবে। ঈশা খাঁর বাড়িটি অসাধারণ স্থাপত্যশীল আর মধ্যযুগে পানাম নগরী আপনাকে কিছু্ক্ষনের জন্য হলেও ভুলিয়ে দেবে আপনার ব্যস্ততা, দুঃখ, আর গ্লানিকে।
পানাম নগর বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শহর। পানাম নগরে কয়েক শতাব্দী পুরোনো অনেক ভবন রয়েছে যা বাংলার বার ভূঁইয়াদের ইতিহাসের সাথে জড়ানো রয়েছে।
সোনারগাঁয়ের ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই পানাম নগরী গড়ে ওঠেছে। সোনারগাঁ লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর থেকে উত্তর দিকে হাঁটলেই সহজে পৌঁছানো যাবে অর্ধ্বচন্দ্রাকৃতি পানাম পুলে। (যদিও পুলটি ধ্বংস হয়ে গেছে)।
এই পুল পেরিয়েই পানাম নগর এবং নগরী চিরে চলে যাওয়া পানাম সড়ক। আর সড়কের দুপাশে সারি সারি আবাসিক একতলা ও দ্বিতল বাড়িতে ভরপুর পানাম নগর।
কারুশিল্প গ্রামে বৈচিত্র্যময় লোকজ স্থাপত্য গঠনে বিভিন্ন ঘরে কারুশিল্প উৎপাদন, প্রদর্শন ও বিক্রয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। দোচালা, চৌচালা ও উপজাতীয় মোটিফে তৈরি এ ঘরগুলোয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অজানা, অচেনা, আর্থিকভাবে অবহেলিত অথচ দক্ষ কারুশিল্পীরা বাঁশ-বেত, কাঠ খোদাই, মাটি, জামদানি, নকশিকাঁথা, একতারা, পাট, শঙ্খ, মৃৎশিল্প ও ঝিনুকের সামগ্রী ইত্যাদি কারুশিল্প উৎপাদন, প্রদর্শনী ও বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া জাদুঘরের অভ্যন্তরে আরো রয়েছে বিনোদন ব্যবস্থার জন্য স্থায়ী পিকনিক স্পট, স্থাপত্য নকশা অনুযায়ী নির্মিত আঁকাবাঁকা মনোরম লেক।
কিভাবে যাবেন:
ঢাকার গুলিস্তান ও যাত্রাবাড়ী থেকে দোয়েল ও বিআরটিসির বাস সকাল-সন্ধ্যা সোনারগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে ছেঁড়ে যাচ্ছে। মেয়র হানিফ উড়াল সেতু আপনার বাহন ও আপনাকে এক ঘণ্টায় উড়িয়ে নিয়ে পৌঁছে দেবে সোনারগাঁ। এখানে এসে সোনারগাঁও লোক শিল্প যাদুঘর ও পানাম নগর ও এখানকার কয়েক শতাব্দী-পুরাতন ভবন দেখে মন ভালো লাগার আবেশে ভরে উঠবে। খাবারের চিন্তাবাদ। সোনারগাঁও বাজারে ভালো খাবার হোটেল আছে। সকালে গিয়ে বিকেলেই ফিরে আসা যায়। নিজস্ব বাহন হলে সবচেয়ে ভালো।