রাজধানী ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে ৮.৬৩ একর জমির উপর একটি চারতলা ভবনে অবস্থিত বাংলাদেশের প্রথম ও প্রধান জাতীয় জাদুঘর। বাংলাদেশর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নানা নিদর্শন জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। প্রাচীন যুগ থেকে আজকের বাংলাদেশ যতগুলো সিড়ি পার করেছে তার সবকটির চিহ্ন ধরে রেখেছে জাতীয় জাদুঘর
ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৫৬ সালে দি ঢাকা নিউজ পত্রিকায় প্রথম ঢাকায় একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ১৯১৩ সালের ২০ মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজের একটি কক্ষে ঢাকা জাদুঘর নামে উদ্বোধন করেন তদানিন্তন বাংলার গভর্নর লর্ড কার মাইকেল। ওই বছরের ৭ আগষ্ট ঢাকা জাদুঘরের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৩ সালে ঢাকা জাদুঘরকে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর হিসেবে ঘোষণা করেন। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত। শাহবাগ এলাকায় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের জন্য একটি অত্যাধুনিক বৃহদায়তন ভবনের উদ্বোধন করা হয়১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ নভেম্বর। আট একর জমির ওপর নির্মিত চারতলা ভবনটির তিনটি তলা জুড়ে রয়েছে ৪৪টি গ্যালারি। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর স্থাপনার নকশা করেছেন দেশের প্রখ্যাত স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জাদুঘর ও সংগ্রহশালা। এটি বাংলাদেশের ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক, নৃ-তাত্ত্বিক, শিল্পকলা ও প্রাকৃতিক ইতিহাস সম্পর্কিত নিদর্শনাদি সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও গবেষণার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান।
জাদুঘরের নিদর্শন সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জাতীয় জাদুঘরে চারটি বিশেষায়িত কিউরেটোরিয়াল বিভাগ রয়েছে। সেগুলি হলো ১. প্রাকৃতিক ইতিহাস বিভাগ, ২. ইতিহাস ও ধ্রুপদী শিল্পকলা বিভাগ, ৩. জাতিতত্ত্ব ও অলংকরণ শিল্পকলা বিভাগ এবং ৪. সমকালীন শিল্পকলা ও বিশ্বসভ্যতা বিভাগ। এছাড়াও রয়েছে আরো তিনটি সহযোগী বিভাগ। এগুলি হলো ১. সংরক্ষণ রসায়নাগার, ২. জনশিক্ষা বিভাগ ও ৩. প্রশাসন বিভাগ।
পরিদর্শনের সময়সূচী, ভিড়ের দিনগুলো
বৃহস্পতিবার বাদে সপ্তাহের অন্যসব দিন এই সংগ্রহশালা সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকে। সাপ্তাহিক ছুটি ও জাতীয় দিবসগুলোতে এখানে বেশী ভিড় হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকাল, শীতকাল ও রমজান মাস পরিদর্শনের সময়সূচি এই তিনটি ভাগে বিভক্ত।
গ্রীষ্মকালীন (এপ্রিল – সেপ্টেম্বর) শনিবার – বুধ (সকাল ১০.৩০ টা থেকে বিকাল ৫.৩০ টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার বিকাল ৩.০০ টা থেকে রাত ৮.০০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে)
শীতকালীন (অক্টোবর থেকে মার্চ) শনিবার – বুধ (সকাল ৯.৩০ টা থেকে বিকাল ৪.৩০ টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার বিকাল ৩.০০ টা থেকে রাত ৮.০০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে)
রমজান মাস: শনিবার – বুধ (সকাল ৯.৩০ টা থেকে বিকাল ৩.০০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে)
টিকেট সংগ্রহ তথ্য
কাউন্টার থেকে টিকেট সংগ্রহ করে জাদুঘরে প্রবেশ করতে হয়। কাউন্টার প্রধান গেইটের পাশে অবস্থিত।
টিকেট মূল্য
৩ – ১২ বছর পর্যন্ত ৫ টাকা
১২ বছর এর উপরে ১০ টাকা
বিদেশী দর্শনার্থী ৭৫ টাকা।
জাতীয় দিবসগুলো যেমন – পহেলা বৈশাখ, ২৬শে মার্চ ও ২১শে ফ্রেব্রুয়ারিতে শিশু ও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে।
প্রবেশ সতর্কতা, গমন/নির্গমন, গাইড
জাদুঘরে প্রবেশের সময় দর্শনার্থীরা ইচ্ছা করলে গাইডের সাহায্য নিতে পারেন। দর্শনার্থীদের কথা মাথায় রেখে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ ৭ জন গাইডের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। প্রবেশকালে ব্যাগ ও অন্যান্য জিনিস নিচে সিকিউরিটি গার্ডদের কাছে রেখে যেতে হবে। ক্যামেরা ও খাবার জিনিস সঙ্গে রাখা যাবে না, মোবাইল বন্ধ রাখতে হবে। জাদুঘরের গমন-নির্গমন ব্যবস্থা একমুখী।
অডিটোরিয়াম, লাইব্রেরী, ক্যান্টিন
বিভিন্ন প্রকার সভা, সেমিনার আয়োজনের সুবিধার্থে জাদুঘর অডিটোরিয়াম ভাড়া নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। অডিটোরিয়ামের মোট ৩টি রুম রয়েছে। বড় রুমের ভাড়া ১৪,০০০ টাকা (সারাদিন)। ছোট রুমের ভাড়া ৫,০০০ থেকে ৭,০০০ টাকা (সারাদিন)।
জাদুঘরের নিজস্ব লাইব্রেরী দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত। এখানে রয়েছে ৩০,০০০ থেকে ৪০,০০০ বই। যা গবেষণার কাজে সহায়তা করে। নিচতলায় সিড়ির দক্ষিণ পাশে জাদুঘরের নিজস্ব ক্যান্টিন রয়েছে। যেখানে চা, কফি ও বিস্কুট পাওয়া যায় তবে দাম তুলনামূলক একটু বেশী।
লিফট, গাড়ি পার্কিং ও অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা
৪ তলা বিশিষ্ট ভবনে দুটি সিড়ি ও ৩টি লিফট রয়েছে। লিফট শুধুমাত্র বৃদ্ধ ও ভি.আই.পিদের ব্যবহারের জন্য। ভবনের দক্ষিণ পাশে ১২০টি গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা রয়েছে। গাড়ি পার্কিং এর জন্য কোন চার্জ দিতে হয় না। এই সংগ্রহশালার প্রতি ফ্লোরে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা রয়েছে এবং নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল রয়েছে।
শাহবাগ জাতীয় জাদুঘর ঠিকানাঃ
শাহবাগ,ঢাকা-১০০০,বাংলাদেশ। ফোন নম্বরঃ +৮৮-০২-৫৮৬১৪৮৪২, +৮৮-০২-৫৮৬১৪৮৪২, ৫৮৬১৫০১২-৩ ইমেইলঃ dgmuseum@yahoo.com ওয়েবসাইটঃ www.bangladeshmuseum.gov.bd