বলধা গার্ডেন ঢাকার ওয়ারীএলাকায় অবস্থিত একটি উদ্ভিদ উদ্যান। এই উদ্যানে প্রচুর দূর্লভ গাছপালা রয়েছে। তদানীন্তন ঢাকা জেলা, বর্তমান গাজীপুর জেলার বলধার জমিদার নরেন্দ্রনারায়ণ রায় চৌধুরী ১৯০৯খ্রিস্টাব্দে বলধা গার্ডেনের সূচনা করেন। তিনি দুটি উদ্যান তৈরি করেন। প্রথম উদ্যানটির নাম রাখেন “সাইকী”। পরবর্তিতে তৈরি করা হয় দ্বিতীয় উদ্যান “সিবলী”। নরেন্দ্রনারায়ণ রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পর কোনো এক সময়ে এ দুটি উদ্যানকে সম্মিলিতভাবেবলধা গার্ডেন নামে আখ্যায়িত করা হতে থাকে। ৩.৩৮ একর জায়গার উপর এই উদ্যান নির্মাণ করা হয়েছে। নরেন্দ্রনারায়ণ এখানে একটি পারিবারিক জাদুঘরও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
বলধা গার্ডেন নির্মাণ করেছিলেন বলধার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী। নরেন্দ্র নারায়ণ বাগানের কাজ শুরু করেছিলেন ১৯০৯ সালে। ১৯৪০ সাল পর্যন্ত চলে নির্মাণ কাজ। ১৯৪৩ সালে নরেন্দ্র নারায়ণের মৃত্যুর পর কলকাতা হাই কোর্টের নিয়ন্ত্রণে একটি ট্রাস্টের কাছে বাগান ন্যস্ত হয়। ১৯৫১ সাল থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত এর তত্ত্ববধানে ছিল পাকিস্তান সরকারের কোর্ট অব ওয়ার্ডস। ১৯৬২ সালে বন বিভাগ এর নিয়ন্ত্রণ পায়।
নরেন্দ্র নারায়ণের বাড়ির নাম ছিল ‘কালচার’। এর পাশে ‘সাইকী’ ও সিবিলী’ নামে দুটি বাগান করেছিলেন। বাগান দুটি সম্মিলিতভাবে আমাদের কাছে বলধা গার্ডেন নামে পরিচিত। পুরাতন ঢাকার ওয়ারীতে এটি অবস্থিত। এর আয়তন হচ্ছে ৩.৩৮ একর। প্রতিদিন সকাল ৮.০০ টা থেকে দুপুর ১২.৩০ টা এবং দুপুর ২.০০ টা থেকে বিকাল ৬.২০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এই বাগান সবার জন্য উন্মুক্ত।
টিকিট কাউন্টার
মূল গেটের বাম পাশে ১টি টিকেট কাউন্টার আছে। লাইন ধরে টিকেট কাটার প্রয়োজন হয় না, তবে সরকারী ছুটি বা বিশেষ দিনে লাইন ধরতে হবে দুপুর বেলায়। সবার জন্য টিকেটের মূল্য একই যেমন ১৫ টাকা। ২ বছর বয়সের শিশুদের জন্য টিকেট লাগে না। শুক্রবার ও শনিবার ভিড় বেশী হয়। দুপুরের দিকে ভিড় বেশী হয়।
বলদা গার্ডেনটির দুইটি অংশ ‘সাইকী’ ও ‘সিবলী’
সাইকী অংশ
এই অংশে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। এর প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে লাল, নীল, সাদা, হলুদ জাতের শাপলায় ভরা অনেকগুলো শাপলা হাউজ, বিরল প্রজাতির দেশী-বিদেশী ক্যাকটাস, অর্কিড, এনযুরিয়াম, বিচিত্র বকুল, আমাজান লিলি ও কৃত্রিম সুরঙ্গসহ একটি ছায়াতরু ঘর।
সিবিলী অংশ
সিবিলী অংশের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে শংখনদ পুকুর, ক্যামেলিয়া, স্বর্ণ অশোক, আফ্রিকান টিউলিপ আরও আছে সূর্যঘড়ি, জয় হাউজ ও ফার্ন হাউজ। এছাড়া বলধা গার্ডেনে ৬৭২ টি প্রজাতির ২৫,০০০ উদ্ভিদ আছে। বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশের গাছ এখানে। শুধু গোলাপই ছিল ২০০ জাতের। ক্যাকটাসের একটি আলাদা সংগ্রহ ছিল। এছাড়া আছে কৃষ্ণবট, ক্যামেলিয়া, ভূর্জপত্র, আমাজান, লিলি প্রভৃতি।
- দুর্লভ বৃক্ষ বলতে ব্রনস ফেলসিয়া রয়েছে। এটা গার্ডেনের গেট দিয়ে ঢুকে একটু সামনে গিয়ে ডান দিকে যেতে হবে।
এখানে কিছু সাধারণ বৃক্ষও রয়েছে। যেমন – কামরাঙা, বিচিত্র রাবার, টগর, হরিতকি, বহেরা, ডেউয়া, বুদ্ধ নারিকেল, বোতলপাম, মিষ্টি তেতুল, ভ্রদ্ররা, রাজ অশোক, জামরুল, সফেদা, খেজুর, সুপারী।
গার্ডেনের ভিতর কোন ফুড কর্ণার ও রেস্তোরাঁ নেই।
গার্ডেনের ভিতরে সূর্য ঘড়ির একটি স্থাপনা আছে। সূর্যের মাধ্যমে সময় অবলোকন করা যায়। এটা গেট দিয়ে ঢুকে ৮০ – ১০০ গজের মধ্যে অবস্থিত। এর কাছে রাস্তার বাম পাশে একটা সান বাধাঁনো পুকুর রয়েছে।
গার্ডেনের নিরাপত্তার বিষয়টি কর্তৃপক্ষ দেখে। অনেক সময় পুলিশ এনেও নিরাপত্তা রক্ষা করা হয়। এছাড়া বাগানের নিরাপত্তা ও অন্যান্য কাজের জন্য প্রায় ১০ – ১৫ জন লোক নিয়োজিত রয়েছে। বন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী ১৩ জন লোক এখানে রয়েছে।
গার্ডেনের ভিতর হকার প্রবেশ নিষেধ। দর্শনার্থীদের জন্য একটি টয়লেটের ব্যবস্থা আছে গার্ডেনের বামদিকে।
বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হবার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে অল্প বয়সী ছেলে মেয়েদের প্রবেশের কারণে সেখানে কর্তৃপক্ষ টহলের ব্যবস্থা রেখেছে।
বেড়াতে আসার কারণ
অনেকে সময় কাটানোর জন্য পরিবারের সদস্যদের সাথে এখানে আসে। আবার বিভিন্ন উদ্ভিদের উপর এসাইনমেন্ট করার জন্য কলেজের অনেক ছাত্র-ছাত্রী আসে । তবে অনেক প্রকৃতি প্রেমিক আসে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এবং ছেলে মেয়েদের বিভিন্ন গাছ সম্বন্ধে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য।এই গার্ডেনের আরেকটি বিশেষ দিক হল বিশ্ববিখ্যাত নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বিখ্যাত কবিতা ক্যামেলিয়া লিখেছেন এই গার্ডেনে বসে।বলধা গার্ডেনের আগের জৌলুস আর নেই। অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। বাগান সংরক্ষণের জন্য যতটুকু যত্নের প্রয়োজন তাও ঠিকমত নেওয়া হয় না। তারপরও বর্তমান ঢাকায় খানিকটা স্বস্তি, খানিকটা আনন্দের জন্য এখনও বলধা গার্ডেনই ভরসা।