ঢাকেশ্বরী মন্দিরের ইতিহাস সম্পর্কে নানা কাহিনী প্রচলিত আছে। ধারণা করা হয় যে, সেন রাজবংশের রাজা বল্লাল সেন ১২শ শতাব্দীতে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। তবে সেই সময়কার অনান্য নির্মাণশৈলীর ধরণের সাথে এর স্থাপত্যকলার মিল পাওয়া যায় না বলে অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন। বিভিন্ন সময়ে এই মন্দিরের গঠন ও স্থাপনার নানা ধরনের পরিবর্তন সাধন করা  হয়েছে। তাই এর আদি রুপ এখন আর খুজে পাওয়া যাবে না। এর নির্মাণ কাল ও নামকরণ নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। বাংলা চৌচালা ও শিখর মন্দিরের মিশ্রণ লক্ষ করা যায় ঢাকেশ্বরী স্থাপত্যে।

 

এর নির্মাণশৈলী ও গঠন প্রণালি থেকে ধারণা করা যায় প্রথমে তা বৌদ্ধ মন্দির ছিল। পরবর্তী সময়ে যা রূপান্তরিত হয় হিন্দুমন্দিরে। উনিশ শতকের শেষের (সম্ভবত সত্তরের দশকের) দিকে মন্দিরটি ছিল জঙ্গলে আবৃত। তখন রক্ষণাবেক্ষণের মতো কোনো পুরোহিত ছিল না।

এখানের যে দৃশ্যগুলো আপনাকে আনন্দ দেবে

মন্দির অঙ্গনে প্রবেশের জন্য রয়েছে একটি সিংহদ্বার। সিংহদ্বারটি নহবতখানা তোরণ নামে পরিচিত। এ সিংহ দ্বারটির ভেতর দিয়ে এক সময় হাতি যাতায়াত করত। পঞ্চরতœ ও নটমন্দির পাশাপাশি অবস্থিত। নট মন্দিরকে ঘিরে আছে একসারি ঘর। মন্দিরের জলাশয় ও বিশ্রামাগারের পূর্ব পাশে সাধুদের উদ্দেশ্যে নিবেদিত কয়েকটি সমাধি রয়েছে।

 

এ মন্দির বা দেউলের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বস্তু হলো শিবলিঙ্গ। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের শ্রী শ্রী দূর্গাদেবী বা দশভুজা মাতা স্বণর্ নির্মিত বলে উপমহাদেশে বিখ্যাত ছিল। দেবী মাতার সিংহাসন কাঠের ওপর রৌপ্য বসানো কারুকার্য খচিত ছিল। ঢাকার সবচেয়ে প্রাচীন মন্দির হল ঢাকেশ্বরী মন্দির। বর্তমানে এখানে প্রতি বছর ধুমধামের সাথে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

 

প্রতিষ্ঠা

বল্লাল সেন সিংহাসনে আরোহণের পর নিজের জন্মস্থানকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন ।

 

যেভাবে যাবেন

রাজধানীর মতিঝিল থেকে বাসে করে শাহবাগ নেমে রিক্সা যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমল্লাহ হলের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত নান্দনিক এই মন্দিরে যাওয়া যায়। অবশ্য মতিঝিল থেকে সরাসরি রিক্সা বা সিএনজি চালিত অটো বা টেক্সি ক্যাব-এ যাওয়া যায়। মতিঝিল থেকে সরাসরি রিক্সাভাড়া হবে ৫০-৬০, সিএনজি চালিত অটো বা টেক্সি ক্যাব-এ ১০০-১২০ টাকা। মতিঝিল থেকে শাহবাগ বাস ভাড়া ১০ টাকা এবং শাহবাগ থেকে রিক্সাভাড়া হবে ২০-৩০ টাকা।

 

প্রবেশ মূল্য

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে কোন প্রবেশ ফি নেওয়া হয়না। যেকোন বয়সি দর্শনার্থী বিনা মূল্যে এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে। হিন্দুদের উপাসনার স্থান হলেও ঐতিহ্যের দিক থেকে ঢাকেশ্বরী মন্দির তার পর্যটনের অকর্ষণ ধরে রেখেছে। তাই মন্দিরের চাইতে এর নান্দনিকতা উপভোগের মজাই বেশি। যে কেউই এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে আসতে পারেন। দেবীর দরজা হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্দ সবার জন্যই খোলা রয়েছে।

 

নিরাপত্তা ও সতর্কতা

দর্শনার্থীরা যেকোন ধরনের সমস্যায় পড়লে এখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরাপত্তা কর্মীদের কাছে অভিযোগ করতে পারেন। তারা সাথে সাথে আপনার সমস্যা সমাধানে সহায়তা করবেন।